



অভিজিৎ দত্ত : বুদ্ধ পূর্ণিমা (Buddha Purnima) বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উৎসব। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বুদ্ধত্ব এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা স্নান করেন, শুভ্র বস্ত্র পরিধান করে বুদ্ধের বন্দনায় রত হন। এছাড়াও এই দিনে বুদ্ধকে স্মরণ করার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্র পাঠ,সূত্র শ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা ইত্যাদি করে থাকেন। বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন।
সবেব সত্তা ভবন্তু সুখী তত্তা, অর্থাৎ সব প্রাণী সুখী হোক। আর্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ তার ধর্মের মূলকথা। শান্তি, অহিংসা, ক্ষমা ও করুণার প্রতিমূর্তি ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।
১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অব বুদ্ধিষ্ট-এর প্রথম কনফারেন্সে বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমার তিথিটিকে বুদ্ধের জন্মতিথি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনেক দেশে এইদিন পশুহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। অনেক দেশে এই পবিত্র দিনটাকে পালন করার জন্য সরকারী ছুটি দেওয়া হয়।
গৌতম বুদ্ধের পূর্ব নাম ছিল সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৬২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের এই দিনে। ৫৮৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের এই দিনেই তিনি সাধনায় সিদ্ধি বা বোধি লাভ করে বুদ্ধ নামে খ্যাত হন এবং তার ধর্মমত বৌদ্ধ ধর্ম নামে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়। নেপালের কপিলাবস্তুর কাছে লুম্বিনী নামক উদ্যানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা রাজা শুদ্ধোধন ও মাতা মায়াদেবী। সিদ্ধার্থ ছোটবেলা থেকেই একটু ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।
যে বয়সে ছেলেরা খেলতে পছন্দ করে সেই বয়সে সিদ্ধার্থ জগত ও জীবন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতেন। জগতের তিনটে জিনিস জরা, ব্যাধি ও মৃত্য তাকে খুব বিচলিত করেছিল। মানুষ কিভাবে এর হাত থেকে উদ্ধার পাবে তাই নিয়ে তিনি চিন্তিত থাকতেন। ২৯ বছর বয়সে রাজকীয় সুখ-ঐশ্বর্য ছেড়ে বেরিয়ে পরেন নিরুদ্দেশের পথে পরম সত্যকে অনুসন্ধান করার জন্য যা মহাভিনিস্ক্রমণ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে ঘাত-প্রতিঘাত করে দীর্ঘ ছয় বছর পর বিহারের বুদ্ধগয়ার কাছে বটগাছের তলে সিদ্ধিলাভ করেন। যে বটগাছের নিচে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তা বোধিবৃক্ষ নামে পরিচিত। বুদ্ধদেব প্রথমে পাঁচজনের কাছে তার ধর্মমত ব্যাখ্যা করেন যা ইতিহাসে ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে খ্যাত। বুদ্ধদেব খুব সহজ সরল ভাষায় তার ধর্মমত প্রবর্তন করেন।বুদ্ধদেব একজন মহামানব ছিলেন। তার নিকট জাতি, শ্রেণী ও গোত্রের কোনও ভেদাভেদ ছিল না। সব প্রাণীসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আছে তা তিনি মর্মে, মর্মে উপলদ্ধি করেন। তাই তিনি বলেছিলেন, সবেব সত্তা ভবন্তু সুখী তত্তা, অর্থাৎ সব প্রাণী সুখী হোক। আর্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ তার ধর্মের মূলকথা। শান্তি, অহিংসা, ক্ষমা ও করুণার প্রতিমূর্তি ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।
বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা অহিংসা ভারতবর্ষের ও মূল নীতি। হিংসা দীর্ণ পৃথিবীতে আজ বুদ্ধদেবের বাণীর কতটা গুরুত্ব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। অথচ আজকে মানুষ কীভাবে হেলায় তার জীবনকে নষ্ট করছে। এখানেই বুদ্ধদেবের গুরুত্ব। যে রাজকীয় সুখ-ঐশ্বর্য ছেড়ে কোন পথের সন্ধানে এবং কেন বেরিয়েছিল আমাদের মনে এই প্রশ্ন আসবে না? তাই বুদ্ধদেবের ধর্ম ও বাণীকে জানা মানে প্রকৃত মানুষ হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।বুদ্ধদেবের আর্যসত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ ও পঞ্চশীল নীতি যদি আমরা মেনে চলতে পারতাম তাহলে পৃথিবীর এই খারাপ অবস্হা আজকে হত না।তাই বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালন আমাদের তখনই সার্থক হবে যখন বুদ্ধদেব জীবন, কর্ম ও তার বাণীর তাৎপর্য আমরা উপলদ্ধি করতে পারবো।
সমস্ত ছবি : সংগৃহীত
