



স্নিগ্ধা বসু ★ সাশ্রয় নিউজ : দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা, পারিবারিক সম্পর্ক সব কিছুকে পেছনে ফেলে এক কঠিন সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী ব্লেক লাইভলি (Blake Lively)। বন্ধু টেলর সুইফট (Taylor Swift) আর ফিরবেন না এই বাস্তবতা তিনি মেনে নিয়েছেন। রাডার অনলাইনের (Radar Online) সূত্রে প্রকাশ, “মাসের পর মাস চুপচাপ থাকার পর ব্লেক আর চেষ্টা করছেন না। তিনি ভেঙে পড়েছেন, কিন্তু মেনে নিয়েছেন যে এই সম্পর্ক আর বাঁচবে না।” সূত্র আরও জানায় যে, “তিনি আর এমন কাউকে ধরার চেষ্টা করছেন না, যিনি ধরা দিতে চান না।” দু’জনের বন্ধুত্বের যে সুগভীর বন্ধন ছিল, তা এখন কেবল স্মৃতির পাতায়। কেউ কেউ বলছেন, এই বন্ধুত্ব আর কোনওভাবেই পুনরুদ্ধারযোগ্য নয়। সূত্র উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, “যা হয়েছে, তার জন্য ব্লেক নিজেই দায়ী। বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের ভাবমূর্তি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।”
টেলর সুইফট-ব্লেকের তিন সন্তান জেমস (James), বয়স ১০; ইনেজ (Inez), বয়স ৮; ও বেটি (Betty), বয়স ৫—এর গডমাদার, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের এমন পরিণতি শুধু ব্যক্তিগত নয়, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এই তিক্ততা। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের বিচারপতি লুইস জে. লিম্যান (Judge Lewis J. Liman) নির্দেশ দিয়েছেন যে, ব্লেক লাইভলির ফোনে টেলর সুইফটের সঙ্গে হওয়া মেসেজগুলিকে মামলার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হবে ও সেগুলি জাস্টিন বালডোনি (Justin Baldoni)-র আইনি টিমের হাতে তুলে দিতে হবে।
এই মামলা ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে জাস্টিন বালডোনির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। অভিযোগকারী হিসেবে ব্লেক লাইভলি বিভিন্ন সময়ে টেলরের সঙ্গে তার কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গেই এই নির্দেশ। তবে এই মেসেজ বিষয়ক নির্দেশে ব্লেকের প্রতিক্রিয়া এসেছে সরবভাবে। ব্লেকের প্রতিনিধি দল জানায়, “আমরা ইতিমধ্যেই জাস্টিন বালডোনির পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রমাণের তুলনায় অনেক বেশি নথি আদালতে দাখিল করেছি। অথচ টেলর সুইফটের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তের পক্ষ বারংবার মামলার মূল বিষয় থেকে মনোযোগ সরাতে চাইছে।” এই বিষয়ে বিলবোর্ডের (Billboard) একটি প্রতিবেদন বলছে, ব্লেকের দিক থেকে দাবি করা হয়েছে, পুরো মামলায় টেলর সুইফটের নাম টেনে এনে একধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিডিয়া-সার্কাস তৈরি করা হচ্ছে, যাতে জনসাধারণের মনোযোগ অভিযোগের প্রকৃত গুরুত্ব থেকে সরে যায়। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে জোর গুঞ্জন যে, টেলর সুইফটকে চাপ দিতে গিয়ে ব্লেক নাকি পুরনো ব্যক্তিগত মেসেজ ফাঁস করার হুমকি দিয়েছিলেন। যা টেলরের দূরত্বের আরেকটি কারণ হতে পারে। এই দাবি যদিও ব্লেকের ঘনিষ্ঠরা সরাসরি অস্বীকার করেছেন, তবে আগুনের আঁচ উড়ে বেড়াচ্ছে হলিউডের অলিগলিতে। ব্লেক ও টেলরের বন্ধুত্ব একসময় ছিল উদাহরণযোগ্য। পার্টি থেকে পারিবারিক অনুষ্ঠান, সব জায়গাতেই তাঁরা ছিলেন ছায়াসঙ্গী। ব্লেকের সন্তানদের নাম পর্যন্ত টেলরের গানে উঠে এসেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সূত্র জানায়, “যা কিছু ছিল, তা অতীত। টেলরের জন্য দরজা আর খোলা নেই। বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা আর আগের মতো হয় না।” যদিও টেলর নিজে এখনও এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি, তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্যই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাঁর কাছে এই অধ্যায় চিরতরে শেষ।
‘গসিপ গার্ল’ (Gossip Girl)-এর প্রাক্তন তারকা ব্লেক লাইভলির জীবনে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে এক বড় ধাক্কা। টেলর সুইফটের মতো একজন বন্ধুকে হারানোর কষ্ট তাঁকে চেপে ধরেছে। কিন্তু এর মধ্যেও তাঁকে লড়তে হচ্ছে আইনি যুদ্ধের সামনের লাইনেও। অন্যদিকে যে সম্পর্ক একসময় ছিল হলিউডের গসিপ-কলামে ‘পারফেক্ট বন্ড’-এর উদাহরণ, তা আজ আইনি ডকুমেন্টের পাতায় ঠাঁই পেয়েছ। যেখানে অনুভূতির জায়গা নেই, কেবল প্রমাণের চাহিদা। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সেলেব্রিটিদের বন্ধুত্বও শেষ পর্যন্ত মানুষিক টানাপোড়েন, ভুল বোঝাবুঝি ও বিশ্বাসঘাতকতার ফাঁদে আটকে পড়তে পারে। তবে মিডিয়ার আলো আর আদালতের রায় মিলে সেই টানাপোড়েন আরও কতটা জটিল হয়ে উঠবে, তা সময়ই বলবে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Blake Lively, Justin Baldoni | টেইলর সুইফটের ব্যক্তিগত বার্তা রক্ষায় মরিয়া ব্লেক লাইভলি,
