



সাশ্রয় নিউজ ★ সমস্তিপুর : ‘আমি টয়লেটে যাচ্ছি’, ট্রেনে স্বামীকে বলেই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন নববিবাহিতা (Bihar Bride Mystery) আঁচল কুমারী (Anchal Kumari)। তারপর তিনি আর ফেরেননি। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা, কিন্তু ওই তরুণীর আর কোনও খোঁজ নেই। এই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে সমস্তিপুর (Samastipur) ও দ্বারভাঙ্গা (Darbhanga) এলাকায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। প্রশ্ন উঠছে, চলন্ত ট্রেনে একজন মহিলা কীভাবে এমনভাবে নিখোঁজ হতে পারেন, যাতে কেউ কিছু টেরই পেল না? সূত্রের খবর, ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া-জয়নগর এক্সপ্রেস (Howrah-Jaynagar Express) ট্রেনের মধ্যে। যেখানে সদ্য বিবাহিত দম্পতি সুমিত কুমার (Sumit Kumar) ও আঁচল কুমারী তেঘড়া (Teghra) থেকে যাত্রা শুরু করে যাচ্ছিলেন দ্বারভাঙ্গার লহেরিয়াসরাই (Laheriasarai)। এই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল গত মে মাসে, মাত্র ৪০ দিন আগে। তখনও হয়ত ভাবেননি সুমিত, তাঁর বৈবাহিক জীবনের শুরুটা এমন এক গভীর অজানায় গড়িয়ে যাবে। সূত্রের খবর, ২৮ জুন, রাতের দিকে সমস্তিপুর স্টেশনের কাছাকাছি যখন ট্রেন পৌঁছচ্ছে, সেই সময় আঁচল সুমিতকে বলেন, ‘‘আমি টয়লেটে যাচ্ছি।’’ স্বামী মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। কিন্তু মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলেও আঁচল ফিরে না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সুমিত। ‘‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত টয়লেটের সামনে লাইন আছে। একটু অপেক্ষা করলাম। কিন্তু সময় কেটে যেতে থাকে। এরপর আমি নিজেই বাথরুমের দিকে যাই ও প্রত্যেকটি টয়লেট খুলি। কোথাও ও ছিল না,’’ সংবাদমাধ্যমে এমনটাই বলেছেন সুমিত কুমার (Sumit Kumar)। সুমিত জানান, এরপর আঁচলের ফোনে একাধিকবার কল করা হয়, কিন্তু ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। মুহূর্তে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে ট্রেন থেকে নেমে বিষয়টি পরিবারের লোকজন ও আঁচলের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জানান। দুই তরফেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিন্তু কোনও রকম সূত্র মেলেনি। আঁচলের কোনও চিহ্ন নেই, না প্ল্যাটফর্মে, না ট্রেনে, না ফোনে। এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্কের সঞ্চার হয়েছে। এক যাত্রী বলেন, ‘‘এই ট্রেনেই তো আমরা পরিবারের ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে যাতায়াত করি। যদি এমনভাবে কেউ হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়, তবে নিরাপত্তা কোথায়?’’ এদিকে, দ্বারভাঙ্গা জিআরপি থানার ইনচার্জ অরুণ কুমার (Arun Kumar) জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কেউ তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেননি। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্ত শুরু করব।’’ তবে ঘটনাটি যতই রহস্যজনক মনে হোক, আঁচলের পরিবার এখনও ভরসা হারাচ্ছে না। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, ও সুস্থভাবেই ফিরে আসবে। কী কারণে ও ট্রেন থেকে নেমে গেল বা আদৌ নেমেছিল কিনা, সেসব এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ও যেখানেই থাকুক, আমরা চাই, অন্তত একবার ফোন করে জানাক সে নিরাপদ।’’ এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন ট্রেনে সিসিটিভি না থাকা নিয়ে। যদি প্ল্যাটফর্মে নেমেও যান আঁচল, কিংবা কেউ তাঁকে নামিয়ে দেয়, তবে তার কোনও ভিডিও প্রমাণ কোথাও নেই বলে উল্লেখ।

এদিকে সুমিতের চোখে ঘুম নেই। ট্রেন যাত্রার সেই মুহূর্ত মনে করেই শিউরে উঠছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও ঝগড়া হয়নি। আমরা একেবারে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলাম। বিয়ের পর এটিই ছিল আমাদের প্রথম দূরত্বের সফর। কে জানত এমন হবে!’’ তবে শুধু ব্যক্তিগত স্তরেই নয়, এই ঘটনা ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে এক গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল। যদি একজন তরুণী হঠাৎ করে চলন্ত ট্রেন থেকে গায়েব হয়ে যেতে পারেন, তবে সাধারণ যাত্রীদের উপরেই কি পড়ে থাকে নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব?নিখোঁজ আঁচল কুমারীর খোঁজে এখন তৎপর দুই পরিবার। দ্বারভাঙ্গা ও সমস্তিপুর স্টেশনে গিয়ে লাউডস্পিকারে বারবার ঘোষণা করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। ট্রেনের অন্যান্য কামরার যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও তথ্য মেলেনি।এই ঘটনার তদন্তে জিআরপি কতটা সক্রিয় হয়, আদৌ কোনও ক্লু উদ্ধার করা যায় কিনা, তা সময়ই বলবে। আপাতত, আঁচলের পরিবারের মতো সুমিত কুমারও দিন গুনছেন, হয়ত কোনও একদিন আবার তাঁর ফোন বেজে উঠবে, ওপারে থাকবে সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর, ‘‘আমি ঠিক আছি।’’
ছবি : প্রতিনিধিত্বমূলক
