Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Basanta Utsav 2025 : বসন্ত এসে গেছে…

Listen

আমিত্বের লড়াইয়ে কে কোথায়, কোন স্থান দখল করবেন সেইমত নৈবেদ্য সাজানো হয়েছে পুজোর। কে চালকলা পাবেন আর কে সন্দেশ,সেটা কে নির্ধারণ করেন বা করে চলেছেন সেটা খুব বেশি জানা নেই। আসলে একথা খুব সত্যি বিনা পরিশ্রমে, বিনা রক্তক্ষয়ে যদি কিছু পাওয়া যায় সেটাকে বাঙালি ফোকোটিয়া বলেই চিহ্নিত করেন। ঠিক যেমনটি ওদেশের কিছু মানুষের কারণে এই দিনটির প্রাপ্তি সেদিক থেকে এরজন্য বিশেষভাবে পালনের কোনো তাগিদ অনুভব করেন না, খুব একটা। তবে হ্যাঁ যদি বলেন রাজনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করতে আমার দৌড় খুব কম। লিখলেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় 

 

 

‘রাঙাহাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে’… এই সুর যেন মনে করিয়ে দেয় লালমাটি আর রবিঠাকুরের পরম প্রিয় সেই শান্তিনিকেতনের দোল উৎসবকে। কিন্তু শুধু কী তাই! ব্যস্ত নাগরিক জীবনে অনেক ধূলো-ধোঁয়া যানজটের মাঝখানে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পলাশগাছ কী পারে না নিমেষে সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিয়ে মনে বসন্তের ছোঁয়া এনে দিতে! সত্যি কথা বলতে কী বছরের এই শেষ ঋতুকে কিছুতেই অস্বীকার যায় না। বর্ষাকালে রাস্তাঘাটের জমা জল একরাশ বিরক্তি নিয়ে আসে। তখন পদাবলী সাহিত্যের রাধার অভিসার তেমনভাবে কেই বা উপভোগ করেন! অথবা হেমন্তের আঘ্রাণ নাগরিক দূষণ ঠেলে মানুষের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে পৌঁছে উঠতে পারে কী? কিন্তু বসন্ত যতই ক্ষণিকের জন্য আসুক না কেন সমস্ত সত্তাকে‌ নাড়িয়ে দিতে জানে। এখানেই বসন্তের জয়মাল্য গাঁথা আছে। পলাশ, শিমূল, অমল ত্রাস, বোগেনভিলিয়া বা বাগানবিলাস, কচি পাতা, কোকিলের কুহুতান এ মন পুড়বে না এমন নরনারী সম্ভবত নেই।

 

বসন্ত হল প্রেমের মতন গতিময়, ছুটন্ত— এছাড়া বোধহয় আর কিছুই নেই। আসলে কখন যে সে আমাদের পরিচিত মনের সীমান্তকে, পেরিয়ে যায় বোঝা যায় না।

 

বহরমপুর শহরের ভাগীরথীর পাশ ধরে হাঁটতে থাকুন দেখবেন পলাশ, শিমূল, কুন্দ, আকন্দ, ঘেঁটু বা ভাট তার নিজস্ব রঙের মেলায় হাতছানি দিচ্ছে। এসময়টা মন চঞ্চল হয় একথা সত্য। বসন্তে কোকিলের ডাকে মন আটকায় না এমনটা হয় কী? তবে আজকাল এই বসন্তের দিনগুলো বড় বেশি অনুষ্ঠান নির্ভর হয়ে উঠেছে। মঞ্চে মঞ্চে বসন্ত উৎসব পালন। এসমস্ত শেখানো বুলি আওড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। অথবা বলতেই পারেন নিছকই কর্তব্য পালন।

 

আসলে অদ্ভুত এক সমাজে আজকাল বাস করছি আমরা এখানে দেখনদারিটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আলাদা করে বসন্তের রূপ দেখার সময় নেই মানুষের। যন্ত্রের মত চলেছি আমরা। সবকিছু নিয়মমাফিক অথবা বলতেই পারি তাসের দেশের মত বয়ে চলেছি সংস্কৃতিকে। যেখানে প্রাণের ছোঁয়া নেই, নতুন সৃষ্টির উন্মাদনা নেই আছে কিছু লোকায়ত প্রবাহ। যে প্রবাহের ধারা শান্ত এবং বড় বেশি নিয়মমাফিক।চল নিয়ম মতে। কিন্তু বসন্ত মানেই তো প্রেম আর আগুন। প্রেম হয়ত আজও তার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চলেছে কিন্তু আগুন?

বেনীমাধব আগুন জ্বলে কই? বসন্ত আগুন সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে পাঠকের বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু এমাসে যে আগুন জ্বলেছিল সে আগুন কী তবে নিভু নিভু! শুধুমাত্র সাদা-কালো শাড়ি আর একুশের গানে! আমাদের শৈশবে কোনোদিন রবীন্দ্রসপ্তাহ, নজরুল মাস অথবা বিদ্যাসাগর সপ্তাহ পালন‌ হয়নি। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনেই এসব পালন হত। হতে পারে বড় মঞ্চ ছিল না একটা তক্তা কয়েকটি রঙিন কাপড় আর ভাড়া করা একটি মাইকেই শ্রদ্ধায় নত হত সকলেই।‌ কিন্তু আজকাল এসবের পরিবর্তে সপ্তাহ,মাস জুড়ে চলে উৎসব। উৎসবমুখর বাঙালির আজ উৎসবটা প্রধান হয়েছে বটে তবে সেটা আজ আর মুখর নেই একথা হলফ করে বলতে পারি। এই বসন্তে ভাষা দিবসের উন্মাদনা দেখলাম অনেক। ভাষা প্রেমিকদের শ্রদ্ধা জানানো, সন্মাননা জ্ঞাপন থেকে শুরু করে সেইসব যোদ্ধাদের স্মরণ সবকিছুই। কিন্তু কাউকে মঞ্চে উঠে বলতে শুনিনি এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী। এসবের কোনো মূল্য নেই! কী সুন্দর সমাজের এই অসম বন্টন। কোন উৎসব পালন হবে, কে কতটা গুরুত্ব পাবে সবটা ঠিক করে দেবে একটা নির্দিষ্ট পক্ষ। সমাজের চেতনা সম্পন্ন মানুষের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।আজ সকলেই অন্ধ হয়ে গেছে। সকলেই যেন নেশাগ্রস্ত ভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। সকলেই ‘আমি’ ছাড়া আর কাউকে সমর্থন করতে রাজি নয়। আমিত্বের লড়াইয়ে কে কোথায়, কোন স্থান দখল করবেন সেইমত নৈবেদ্য সাজানো হয়েছে পুজোর। কে চালকলা পাবেন আর কে সন্দেশ,সেটা কে নির্ধারণ করেন বা করে চলেছেন সেটা খুব বেশি জানা নেই। আসলে একথা খুব সত্যি বিনা পরিশ্রমে, বিনা রক্তক্ষয়ে যদি কিছু পাওয়া যায় সেটাকে বাঙালি ফোকোটিয়া বলেই চিহ্নিত করেন। ঠিক যেমনটি ওদেশের কিছু মানুষের কারণে এই দিনটির প্রাপ্তি সেদিক থেকে এরজন্য বিশেষভাবে পালনের কোনো তাগিদ অনুভব করেন না, খুব একটা। তবে হ্যাঁ যদি বলেন রাজনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করতে আমার দৌড় খুব কম। ওই টেনে কেটে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়েছি তাতে রাজনীতির জ্ঞান বিশদে থাকা সম্ভব নয়। তথাপি কিছু কিছু রাজনৈতিক মঞ্চের ভাষা দিবসের পালন বেশ নাটকীয় মনে হয়েছে। এটুকু বিদ্যে সম্ভবত আমার মত অনেক মানুষেরই আছে বলে আমার ধারণা। বসন্তের সঙ্গে আগুনের সম্পর্কে ভাষা আসবেই সেইটেই স্বাভাবিক। রঙের আগুন যেমন প্রকৃতির স্বাভাবিক অনুষঙ্গ ঠিক তেমনই প্রতিবাদ এবং আগুনেভাষাও বসন্তের অনুষঙ্গ বলেই আমার বিশ্বাস। সেদিক থেকে বলব এই আগুনের রং ফিকে হয়েছে অনেকাংশেই।

 

 

 

আবার ফিরে আসি বসন্তের কথায়। বসন্ত হল প্রেমের মতন গতিময়, ছুটন্ত — এছাড়া বোধহয় আর কিছুই নেই। আসলে কখন যে সে আমাদের পরিচিত মনের সীমান্তকে, পেরিয়ে যায় বোঝা যায় না।

আর এই পেরিয়ে যাচ্ছে বলেই , জীবনে ভালোবাসা আসে। প্রাণ আছে এখন ও! বসন্ত ভালোবাসার কথা বলে। আর যাকে একাগ্রভাবে ভালোবাসা যায়, সেই মানুষটির জীবনে ঘটে যাওয়া এমন অনেক অতীত, বিগত সমস্ত বসন্তদেরও আপনার করে নিতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসতে ইচ্ছে জাগে। মনে হয় বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। তার সমস্ত ছায়াসত্তার সঙ্গে সঙ্গ করতে ইচ্ছে জাগে। এইভাবে পেরিয়ে যেতে হয় জীবনের এক একটি প্রান্তর। তোমার বসন্তের ডালি রিক্ত হয় নাই।বসন্ত কখনও প্রেমের দুয়ারে কড়া নাড়ে আবার কখনও অবহেলার। তবুও বসন্ত আসে সমস্ত কিছুর ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে। শহর জুড়ে যেন রঙের মেলা। হয়ত এই বুঝি ইচ্ছের প্রান্তর পেরিয়ে চলা। ক্রমান্বয়ে ….? একা একা…?
হয়ত বসন্তও তাই !

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Sasraya News, Sunday’s Literature Special 55| Issue 55| 9 March 2025 | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | বসন্ত সংখ্যা, ৯ মার্চ ২০২৫ | সংখ্যা ৫৫

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment