



বসন্ত (Basanta Utsav) উৎসবের আরেক নাম আবার কাম উৎসব। কেননা, সত্য যুগে এই দিনে ভগবান শিবকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য পার্বতীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রেমের দেবতা কামদেব ও প্রেমের দেবী রতি। কিন্ত শিবের ধ্যান ভাঙাতে গিয়ে কামদেব শিবের রোষানলে পড়েন ও ভস্ম হয়ে যান। পরে দেবী রতির অনুরোধে শিব কামদেবের প্রাণ ফিরিয়ে দেন। তারপর থেকেই বসন্ত উৎসবের আরেক নাম হয় কাম উৎসব। কলম ধরলেন : অভিজিৎ দত্ত

দোল বা হোলি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। যা বহু প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছে। যীশুখ্রীষ্টের জন্মের ক’য়েক শতাব্দী পূর্বে থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। নারদ পুরাণ, গরুড় পুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এটি উদযাপিত হয়।দোল যাত্রা বা দোল পূর্ণিমা পালিত হয় রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনীর উপর নির্ভর করে।

হোলি উৎসব পালনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সত্য যুগে ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহদেব অবতারে অত্যাচারি অসুর হিরণ্যকশিপুর বধের কাহিনীর সঙ্গে। হিরণ্যকশিপুর তার ছেলে প্রহ্লাদ,যে ছিল বিষ্ণুভক্ত, তাকে বিষ্ণুর পূজা করতে নিষেধ করেন। কিন্ত প্রহ্লাদ তার কথা না শোনায় হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকাকে দিয়ে প্রহ্লাদকে বধ করার চেষ্টা করেন। কিন্ত প্রহ্লাদকে আগুনে পোড়াতে গিয়ে হোলিকা নিজেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনাকে স্মরণ করে হোলি বা রঙের উৎসব চালু হয়।বাংলায় এই দিনটিতে অনেকে ন্যাড়া পুড়িয়ে উৎসব করেন বলেন এটি ন্যাড়া পোড়া উৎসব নামে পরিচিত। অশুভের উপর শুভর জয়ই হল হোলি বা রঙ উৎসবের প্রধান কথা। এটা শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও চালু আছে। বিভিন্ন জায়গাই বিভিন্ন নামে এই হোলি বা দোল উৎসব পালিত হয়।ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব জন্ম গ্রহণ করেন বলে এই দিনটির তাৎপর্য অন্যরকম। আধুনিক সময়ে দোল উৎসব বা বাসন্তী পূর্ণিমার শুরু রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র সমীন্দ্রনাথের হাত ধরে।

এরপর রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং শান্তিনিকেতনে এই উৎসব প্রচলন করেন যা এখনও পর্যন্ত চালু আছে। ফাল্গুন মাসে এই উৎসব হওয়ার জন্য এর আরেক নাম ফাগওয়ারা। বসন্ত উৎসবের আরেক নাম আবার কাম উৎসব। কেননা, সত্য যুগে এই দিনে ভগবান শিবকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য পার্বতীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রেমের দেবতা কামদেব ও প্রেমের দেবী রতি। কিন্ত শিবের ধ্যান ভাঙাতে গিয়ে কামদেব শিবের রোষানলে পড়েন ও ভস্ম হয়ে যান। পরে দেবী রতির অনুরোধে শিব কামদেবের প্রাণ ফিরিয়ে দেন। তারপর থেকেই বসন্ত উৎসবের আরেক নাম হয় কাম উৎসব।

মূল কথা হল, শীতের শেষে ও ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে যত আবর্জনা, পাতা পচা সব কুড়িয়ে জ্বালিয়ে নতুনের আহ্বান করাই হচ্ছে বসন্ত উৎসবের মূল কথা।

প্রাণে নতুনের আহ্বানকে জাগানোর জন্যই কবিগুরু গেয়েছিলেন, “খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল।” অর্থাৎ ভেতরের অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তিকে জাগ্রত করতে পারলে তবেই দোল উৎসব সার্থক হবে। আমরা কি সেই চেষ্টা করি? প্রশ্নটি নিজেদেরই!
ছবি : সংগৃহীত
