



পলাশ শিমুল আগুন রাঙা-রঙে রঙিন হয়ে আছে কিন্তু মন মানসিকতা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে এখন আর কেউ মনে হয় না সেভাবে বড়দের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে তাদের খেলা শুরু করে। হয়তো কোন কোন জায়গায় আছে কিন্তু আমার দেখা শোনার মধ্যে এখনও অব্দি সেটা চোখে পড়েনি এখন আবার কিছু কিছু সংস্থা তারা এই বসন্ত উৎসবটাকে উদযাপন করে শান্তিনিকেতনে ঢঙে। লিখলেন : মমতা রায় চৌধুরী
ফাগুন আসলেই মনের ভেতর কেমন যেন আনচান করে কার প্রত্যাশায় তা ঠিক বলতে পারবো না। প্রকৃতির কোলজুড়ে তখন ফাগুনের আনাগোনা ফাগুনী হাওয়ায় মন মাতানো ঠিক মিশরীয় গ্লাসে মদ পানের মতো। হয়তো প্রত্যেকের ছেলেবেলা বা মেয়েবেলা আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে যদি চলে যাওয়া যায় তাহলে এরকম ভাবনাটাই বোধহয় বেশি বোধের সত্তাকে নাড়া দেয়। মনে পড়ে আমাদের মেয়ে বেলার কথা। তখন কত৭-৮ হয়তো আরো ছোটবেলা থেকেই আমরা দোল আসলে মেতে উঠতাম। তবে বয়সন্ধিকালের সেই সময়ের কথাগুলো বেশি স্পষ্ট করে মনে পড়ছে।
এই ভালবাসায় কতটা প্রাণ আছে সেটা বলা মুশকিল। যে মেয়েটি আজ একে অপরের এত কাছে বসন্তের রঙে জারিত তাকেই দেখতে পাওয়া যায় আবার পরবর্তী ক্ষেত্রে অন্য কোন বসন্তের রং মাতিয়ে তোলে। ক্রমশঃ বদলে যাচ্ছে সবকিছু।
আমাদের পাড়ার সঙ্গী সাথীরা আমরা আগের দিন ঠিক করে নিতাম আবির কখন খেলবো আর রং কখন খেলব মায়েরা সকাল সকাল রান্নাবান্না করে নিতেন। তার আগে ভোর থেকে উঠে সকলের বাড়ি উঠোন গোবর দিয়ে লেপা হত মাটির ঘরগুলোকেও লেপা হতো গোবর মাটি দিয়ে। শুকিয়ে গেলে প্রত্যেকের বাড়ি ঝা চকচকে আর ঠিক আর রাত্রিতে চাঁদের আলোয় অপূর্ব সুন্দর লাগতো বাড়িঘরগুলি যেন সমস্ত পেল বতা এই উঠোন বাড়িঘর জুড়ে। সে এক মায়াবী পরিবেশ। যাই হোক তারপর স্নানটান করে মায়েদের দেখতাম গোপালকে আবির লাগাতে তার সঙ্গে অন্যান্য দেব-দেবীকেও। আর আমাদের শিখিয়েছিলেন ঠাকুরকে আবির লাগিয়ে প্রণাম করে তারপর বড়দেরকে আবির পায়ে দিয়ে একটু মিষ্টিমুখ করিয়ে প্রণাম করতে। আমরা তাই করতাম আর ঠিক দুপুর থেকে শুরু হতো রং খেলা। আমরা প্রত্যেকেই লুকিয়ে থাকতাম কে কাকে রং লাগাবে আগে আর এমন রং লাগাবে যাতে তুলতে খুব কষ্ট হয়। একবার মনে পড়ে আমাকে একবার রং লাগিয়েছিল আলকাতরা মিশিয়ে তারপর থেকে আমার বসন্ত আসলেই আর বসন্তের সঙ্গে জড়িয়ে রং ভীষণ ভয় পেতাম। এই নিয়ে অবশ্য বকুনিও কম খেতে হয়নি। যে লাগিয়েছিল তার মা-বাবাও ভীষণ বকেছিলেন।
এ আবার কি রংয়ের নাম করে এসব লাগানো কেন? যাই হোক সে তার ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। আর তার সঙ্গে ছিল কিছু এঁচোড়ে পাকা দাদা ওরা আমাদের দিয়ে চিঠিপত্র আনাগোনা করাতো একে গ্রুপে বসন্তের মাস তার ওপর এই একটা দিনের সকলের অবাধ যাতায়াত সেটা আমরা প্রথমদিকে বুঝতে পারতাম না আমাদের বলতো এই কাগজটা একটু দিয়ে দিবি খামে ভরা আছে। আর আমরা পুতুল খেলতে খুব ভালবাসতাম। ওই দিদিটা পুতুল বানাতেও খুব পারতো ভালো। আর পুতুল বানানোর লোভ দেখালে আমরা সেই কাজটা আরো বেশি করে করতাম। তবে সেই দাদা বা দিদির নামটা এখানে বলছি না। পরে টের পেয়েছিলাম যে আসলে এই দোলের মধ্যে দিয়ে ওরা একে অপরকে হৃদয়ের উষ্ণতায় ছুঁতে চাইতো। এই দিনটাতেই অবাধ মেলামেশার সুযোগ ছিল কে কাকে রঙ দেবে আর এই দিনটাতে কাছে আসা ।আমরা তো একবার সেই দাদা বা দিদিকে দেখেও ফেলেছিলাম একসঙ্গে কিভাবে তারা রং খেলছে সে এক অন্যরকম রং খেলা। এখন বুঝতে পারি হৃদয়ের উষ্ণতার পারদ যখন চড়তে থাকে তখন শুধুমাত্র একটু দেখা বা একটু হাতে হাত রেখে কাছে আসা সেটাই ছিল সেই সময়কার এক স্বর্গীয় সুখ আজকাল যদিও সেই বসন্তের হাওয়াটা হয়তো একই আছে। পলাশ শিমুল আগুন রাঙ্গা রঙে রঙিন হয়ে আছে কিন্তু মন মানসিকতা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে এখন আর কেউ মনে হয় না সেভাবে বড়দের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে তাদের খেলা শুরু করে। হয়তো কোন কোন জায়গায় আছে কিন্তু আমার দেখাশোনার মধ্যে এখনো অব্দি সেটা চোখে পড়েনি এখন আবার কিছু কিছু সংস্থা তারা এই বসন্ত উৎসবটাকে উদযাপন করে শান্তিনিকেতনে ঢঙে। এখন কচিকাঁচা থেকে শুরু করে সকল বয়সীদের সেই সংস্থার উদযাপিত বসন্ত উৎসবে ।এখানেও দেখা যায় বসন্ত উৎসবের নামে পরের দিকে কিরকম মাতলামি এখন ছেলেমেয়েদের মেলামেশাটা অনেক মুক্ত হয়ে গেছে আগের মত এরকম লুকিয়ে চুরিয়ে নয়। এখন যেন মনে হয় ভালোবাসাটা অনেক মুক্ত । তবে এই ভালোবাসায় কতটা প্রাণ আছে সেটা বলা মুশকিল। যে মেয়েটি আজ একে অপরের এত কাছে বসন্তের রঙে জারিত তাকেই দেখতে পাওয়া যায় আবার পরবর্তী ক্ষেত্রে অন্য কোন বসন্তের রং মাতিয়ে তোলে। ক্রমশ বদলে যাচ্ছে সবকিছু । তাছাড়া এখন আর চিঠিপত্র কেই বা লেখে এখন এসে গেছে ইন্টারনেটের যুগ। এখন সকলে বসন্ত উৎসব যাপনের মুহূর্তগুলোকেও ঠিক সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে কে কটা লাইক কমেন্টস দিল তারও জন্য গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে। আগে তো এসব ছিল না। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় ভালো ছিল আমাদের সেই মেয়েবেলা ছেলেবেলার দিনগুলো সকলে কি সুন্দর একসঙ্গে আমরা একত্রিত হতাম হৃদয়ের রং বসন্তের সঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতাম তবে এখন যে বসন্ত উৎসব পালিত হয় সেটা ক্ষেত্রেও দেখি বেশ সুন্দর লাগে কিন্তু পরস্পরের হৃদয় মনের সম্পর্কটা অনেকটা কৃত্রিম মনে হয় আজ হয়তো কোনো সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেখানে দেখা গেল যে অর্থনৈতিক বিষয়টা অনেক বেশি প্রকট হয়ে দাঁড়ায় ।সকলে সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারে না যাই হোক সেটা তো বিতর্কিত বিষয় সে নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। আজ ৫০ বছরে দোরগোড়ায় পৌঁছে বারবার শুধু এটাই মনে হয় যদি সেই দিনগুলো ফিরে পেতাম আবার নতুন করে বসন্ত উৎসবটাকে সুন্দর করে উদযাপন করতে পারতাম হৃদয় মনে সব সময় দোলা দিয়ে যায় “লাগিল দোল জলস্থলে… হৃদয়ের প্রতি পরতে পরতে বসন্তের বাসন্তী রং দাগ কেটে দিয়ে যায়। শিমুল পলাশের আগুন রং বসন্তের যেমন গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয় তেমনি আমাদের মনটাকেও আবার নতুন করে রাঙিয়ে দেয় চলে যায় সেই বয়সন্ধিকালের দিনে। এভাবেই বসন্ত বিরাজ করুক সকলের মনে থাক না তার রংটা অন্যভাবে মিলেমিশে।
ছবি : সংগৃহীত
