



সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ কলকাতা : বাংলাদেশে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার জেলায় জেলায় অশান্তির খবর। দেশটির সংখ্যালঘু বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীদের পরিবারের হামলা হয় বলে উল্লেখ। এ বিষয়ে সদ্য গঠিত দেশের অন্তঃবর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠলে রাজধানী শহর ঢাকা সহ দেশটির একাধিক জায়গায় সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের উপর হামলার অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির সনাতন ধর্মালম্বীরা ৮ দফা দাবি সামনে নিয়ে আসেন। সেই দাবির ভিত্তিতে ছোট বড় আন্দোলন, সভাসমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী করছেন। সেই দাবিগুলির ভেতর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :
“১. গত ক’য়েকদিনে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর ভাঙচুর, লুটপাট নির্যাতনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা এবং নিরীহ সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান। ২. সীমান্ত সংলগ্ন যেসব অঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়ি ছেড়ে সীমান্তে চলে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ও সম্মানের সহিত নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনা। প্রয়োজনবোধে সরকারী উদ্যোগে তাদের গৃহ নির্মাণ ও পুনর্বাসন করা। ৩. হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে পূর্ণাঙ্গ রূপে হিন্দু ফাউন্ডেশন হিসেবে নিবন্ধন এবং তার সামগ্রিক কর্মপরিসর ও অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধি করে, কোনো প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ব্যক্তি ব্যতীত নিরপেক্ষ ও সনাতনীদের প্রকৃত শুভচিন্তক ব্যক্তিদের দ্বারা পুনর্গঠন। ৪. সরকারের সকল পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। ৫. বিদ্যমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ন্যায় পৃথক, স্বতন্ত্র “জাতীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন” গঠন, যা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করে আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তাপূর্বক ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করবে। ৬. সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনায় বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান এবং আক্রমণের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। পরিস্থিতি পূর্ণরূপে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে এই ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান। ৭. বিশেষ “সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন” প্রণয়নের মাধ্যমে বিশেষ গুরুত্বের সাথে সংখ্যালঘুদের মন্দির, ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাটের দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ। ৮. সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব নির্বিঘ্নে যথাবিধি পালন হওয়ার ব্যাপারে উপযুক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান।”
Bangladesh Update : বাংলাদেশের করুণ সময়। লিখছেন : দেবব্রত সরকার
তাঁদের এই দাবি থেকে প্রশ্ন ওঠে, অনিশ্চিত জীবনের পথে দেশটির সনাতনী হিন্দুরা ? কোথাও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কোথাও শারিরীক নির্যাতন, লুটপাট, ভাঙচুর! কেন সসংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন? প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে! অনেকেই দেশের মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তে নিশ্বাস ফেলছেন, শুধুমাত্র আশ্রয়ের জন্য বলে সংবাদ সূত্রে খবর। তবে কী দেশটিতে সংখ্যালঘুদের কোনও নিরাপত্তা নেই? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা মেলে, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংখ্যাগুরু ও সনাতনী হিন্দুরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শরিক হয়ে ছিলেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের কবল থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সনাতনী হিন্দু (সংখ্যালঘু) উন্নয়নে যথোপযুক্ত দৃষ্টি দেওয়া হয়নি বলেই উল্লেখ। এমনকী সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনেও সনাতনী হিন্দু বহু ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন! অন্যায় হলে অন্যায়ের প্রতিবাদ, ভাল হলে আনন্দের শরিক হয় সর্বতোভাবে। তা দেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদেই। কারণ দেশটি গণপ্রজাতন্ত্রী।
সেখানে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু প্রশ্ন আসে কোত্থেকে! তবু তাঁদের শুনতে হয়, ‘ভারত যা… ‘ কেন এই হিংস্র কথাবার্তার অবতারণা? একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও জুটেছে অত্যাচার। হাত দেওয়া হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাতেও। এমতাবস্থায়, ৮ দফা দাবি সামনে নিয়ে এসে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুরা দাবি তুলেছেন, সংখ্যালঘু নয় আমরা বাংলাদেশ। আরো দাবি তুলেছেন যে সনাতনী হিন্দু সংখ্যালঘু সেল /সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সমস্ত দাবি নিয়ে পথে সনাতন ধর্মাবলম্বী সহ সমস্ত অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও তাঁরা এই দাবি-দাওয়া নিয়ে মুখরিত বলেই সূত্রের খবর।
ছবি : সংগৃহীত
আরও খবর : Purba Burdwan : বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন পরিযায়ী শ্রমিক
