Sasraya News

Autism, ABA Therapy | অটিজমে নতুন আশার আলো, কলকাতায় বিশ্বমানের ABA থেরাপি পরিষেবা শুরু

Listen

মৈনাক দাস ★ সাশ্রয় নিউজ, কলকাতা: অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারগুলোর জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল পূর্ব ভারত। আর এই পদক্ষেপের কেন্দ্রে রয়েছে ডিসান হাসপাতাল (Desun Hospital), বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক বিহেভিয়ার মোমেন্টাম ইন্ডিয়া (Behavior Momentum India – BMI) ও মাইন্ডস্পেস আকাডেমি (Mindspace Academy)। সম্প্রতি বিশ্ব অটিস্টিক প্রাইড ডে ২০২৫ (World Autistic Pride Day 2025) উপলক্ষ্যে একসঙ্গে পথ চলা শুরু করেছে এই তিন প্রতিষ্ঠান। লক্ষ্য, অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে (Autism Spectrum Disorder) আক্রান্ত শিশুদের উন্নত মানের, বিজ্ঞানভিত্তিক থেরাপি পৌঁছে দেওয়া, যা এতদিন পূর্ব ভারতে কার্যত অনুপস্থিত ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে গড়ে প্রতি ৩৯টি শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। এটি একটি জটিল নিউরোডেভেলপমেন্টাল অসুবিধা, যা ভাষা, সামাজিক আচরণ ও শেখার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। অথচ সময়মতো ও সঠিক থেরাপি পেলে এই শিশুরাও সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারে, স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল তার উল্টো, পূর্ব ভারতে এমন আধুনিক থেরাপির পরিকাঠামো ছিল না বললেই চলে।

এই দীর্ঘ দিনের ঘাটতি পূরণে এগিয়ে এসেছে মাইন্ডস্পেস আকাডেমি, ডিসান হাসপাতাল এবং BMI-এর যৌথ উদ্যোগ। কলকাতার বুকে প্রথমবারের মতো চালু হল বিশ্বমানের অ্যাপ্লায়েড বিহেভিয়ার অ্যানালিসিস বা ABA থেরাপি (Applied Behavior Analysis Therapy), যা আন্তর্জাতিকভাবে অটিজম চিকিৎসায় অত্যন্ত সফল ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। BMI-এর প্রতিষ্ঠাতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন BCBA-D ডাঃ স্মিতা অবস্থি (Dr. Smita Awasthi) বলেন, “এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র একটি থেরাপি চালুর ঘটনা নয়, বরং এটি অটিজমের প্রতিক্রিয়ায় একটি বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি রচনার পদক্ষেপ। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আমরা এই প্রজেক্ট শুরু করেছি।” ডিসান হাসপাতালের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ইনিশিয়েটিভসের ডিরেক্টর শাঁওলি দত্ত (Shaoli Dutta) -এর কথায়, “এই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য কেবল চিকিৎসা নয়, পরিবারগুলোকে মানসিক সাহস জোগানো। ABA কেবল একটি থেরাপি নয়, এটি এমন একটি প্রয়োগযোগ্য পদ্ধতি যা বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে শিশুদের জীবনে মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়।” তিনি আরও যোগ করেন, “অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সঠিক চিকিৎসা ও সহানুভূতিশীল সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। আমরা চাই এমন একটি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে, যেখানে কোনও অভিভাবক নিজেকে একা অনুভব করবেন না। তাদের সন্তান যেন পরিপূর্ণ জীবনের স্বাদ পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

মে ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই কেন্দ্র ইতিমধ্যেই আশাব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছে। অনেক পরিবার জানিয়েছেন, তাঁরা বহুদিন ধরে এমন একটি কেন্দ্রের খোঁজ করছিলেন যেখানে শুধু ক্লিনিকাল পদ্ধতিতে নয়, একটি মানবিক স্পর্শে সন্তানদের উন্নতি ঘটবে। একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, “আগে খুব অসহায় লাগত। এখন জানি, আমার সন্তান এমন একটি পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে যেখানে শুধু রোগ নয়, তার সামগ্রিক বিকাশের কথা ভাবা হয়।” এই অনুষ্ঠানে তিনজন সফলভাবে ABA থেরাপি সম্পন্ন করে সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা শিশুকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। তাদের গল্প অনুপ্রেরণা জোগায় বাকি পরিবারগুলোকে, যারা এখনও লড়াই করছেন।মাইন্ডস্পেস আকাডেমির কর্ণধারদের মতে, এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। বিভিন্ন শহরে স্যাটেলাইট সেন্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে এই পরিষেবার আওতা আরও বিস্তৃত হয়। একইসঙ্গে প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টদের সংখ্যা বাড়ানো, অভিভাবকদের কাউন্সেলিং এবং সচেতনতা কর্মসূচির দিকেও নজর দেওয়া হবে।ডিসান হাসপাতাল ও BMI-এর এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অটিজম পরিচর্যার ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতে এক নতুন মাইলফলক। এর ফলে হাজার হাজার পরিবার পাবেন এক নতুন ভরসা, আর অসংখ্য শিশু পাবে এক আলোকিত ভবিষ্যৎ। এটি কেবল একটি চিকিৎসা উদ্যোগ নয়, বরং মানবিকতা, বিজ্ঞান ও অন্তর্ভুক্তির এক অনন্য উদাহরণ। অটিজম নিয়ে ভারতীয় সমাজে এখনও নানা ভ্রান্ত ধারণা ও সামাজিক চাপ রয়েছে। এমন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয়, মানসিক স্বস্তি ও সামাজিক সচেতনতা গড়তেও বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। আগামী দিনগুলিতে এটি কতটা বদল আনে, সেদিকেই নজর এখন সমস্ত অভিভাবকের।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Maharagni : কাজল ও প্রভু দেবার এক ফ্রেমে ফিরতে সময় লাগল প্রায় ২৭ বছর

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read