



শ্রীতন্বী চক্রবর্তী :: আর তারপর, হঠাৎ একদিন সব বাতি নিভে যায়, যখন বাড়ি ফেরার পথ আর অস্তিত্বসঙ্কট সব মিলেমিশে এসে দাঁড়ায় চোরাবালি দুপুরের মাঝখানে। সন্ধ্যের সব আলো কনে-দেখা হয় না, কিছু কিছু বয়ে আনে বিচ্ছেদের সানাই। আজ যখন অষ্টমীর কোলাহলে চুপচাপ বিধ্বংসী, আধবাঁকা চাঁদ এসে গিলে নিতে চাইছিলো মস্ত বড় ছাতিম গাছটাকে, শুধু বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম, মনের মধ্যে সেতারের বিদায়ী সুর বাজছিলো, প্রত্যেকটা ছেড়ে যাওয়া কত কঠিন, কিন্তু ভালোবেসে ধরে রাখতে পারেই বা ক’জন?

প্রত্যেকটা চলে যাওয়া কারোর কাছেই কাম্য নয়। আবার কিছু কিছু বিচ্ছেদের অপাপবিদ্ধতাতেই অন্যের মুক্তি; আয়নার ধার-ঘেঁষা জীবন থেকে ভাঙা টুকরোগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে জমিয়ে রাখতে নেই, পায়রাদের ঝঞ্ঝাটে উড়িয়ে দিয়ে নিষ্ক্রমণের পথে এগিয়ে যেতে হয়। ছাতিমের গন্ধে লোভী মন ছুটে চলে গঙ্গার ধারে, অস্থিবিসর্জনের পর জীবনের ধারাভাষ্য দেখছিলাম ওই নিমতলাতেই। কয়েকটা ছায়াশরীর, কিছু পরজীবী নিশ্বাসপ্রশ্বাস, বিশাল বটের ছায়ায় ধোঁওয়া হয়ে ওঠে হৃৎপিণ্ডে আলেয়া জ্বালানো চকমকি পাথরগুলো। সুতো আলগা হতে হতে ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে নক্সীকাঁথার রঙ, গঙ্গার জল উথালপাথাল হয়, বলে, ‘অনেক তো হলো, সময় কি তোমারও হয় নি?’ ওই দূরে, আরও দূরে দাঁড়হীন স্থবির নৌকার মত ইস্পাতকঠিন দাঁড়িয়ে থাকে ওভারব্রিজ, বলে, ‘না, আর একটু থাকো, ওকে যেতে দিয়েও কাছে ধরে রাখো, কথা বলো, কত কথা তো এখনও বাকি’।
কেউ ফিরে আসতে চাইলেও আসতে পারে না, কেউ ফিরে না আসতে চাইলেও বাস্তবের শেকলে শক্ত করে বেঁধে রাখি। প্রত্যেকটা মৃত্যু তো চলে যাওয়া, প্রত্যেকটা সংযোগচ্যুতিই কি মৃত্যু নয়?
ছবি : লেখক
আরও পড়ুন : Durga Puja : দুর্গোৎসবের তিথিগুলোর সঙ্গে ‘মহা’ যুক্ত হয়েছে কেন জানেন?
