



আনন্দধারা…
ম ম তা রা য় চৌ ধু রী
পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত কালনা শহরে একটি প্রখ্যাত স্কুল ‘কালনা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। বিদ্যালয়টি 1901 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই বিদ্যালয় উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল শ্রীমতী শান্তি গাঙ্গুলী প্রধান শিক্ষিকা থাকাকালীন। এই বিদ্যালয় আজও সুনামের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মীরা প্রত্যেকে স্বতঃস্ফূর্ত- আনন্দপ্রণোদিতভাবে বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।সম্প্রতি ‘কালনা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’-এ নারী শিক্ষার মূল কাণ্ডারী বাংলা গদ্যের জনক, সমাজ সংস্কারক, ভাষা সংস্কারক, শিক্ষা সংস্কারক সর্বোপরি উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা বিদ্যালয় অন্ত প্রাণ শ্রীমতি কৃষ্ণা পাহাড় মহাশয় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আবোক্ষ মূর্তি প্রদান করেন, ওঁর জন্মদিনেই উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান এবং বিদ্যালয়ে চাঁদের হাট বসেছিল। প্রথমেই ডেপুটি সেক্রেটারি (WBBPE) ড. পার্থ কুমার কর্মকার তার হাত ধরেই আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন, প্রদীপ প্রজ্বলন এবং আগুনের পরশমণি সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর একে একে গুণীজন, বিধায়ক, পৌরপতি, উপ পৌরপতি, বিদ্যালয়ের কার্যকরী সমিতির সভাপতি শ্রী শান্তি সাহা মহাশয়, কবি, সাহিত্যিক অনিল চক্রবর্তী , শ্রী গোবিন্দ রায়, স্কুলের প্রাক্তন বড়দি শ্রীমতী পাপড়ি সাহা সহ আরও অনেক বিদগ্ধজনের আগমনে বিদ্যালয়ে এক মনোজ্ঞ পরিবেশে পরিণত হয়েছিল।ওইদিন যেন বিদ্যালয়ের চাঁদের হাট বসেছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মদিনে ও ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গে আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন এক অনন্য নজির রেখে গেল। আর যিনি এই মূর্তি প্রদানের করলেন, তিনি বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষিকা শ্রীমতী কৃষ্ণা পাহাড়। তিনি বিদ্যালয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পরও বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আসলে তিনি বিদ্যালয় অন্তঃপ্রাণ। শ্রীমতী কৃ্ষ্ণা পাহাড় 1995 সালে প্রথম কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছিলেন। তখন থেকেই তিনি মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন যে নারী শিক্ষার অঅগ্রগতির প্রতীক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দয়ার প্রতি মূর্তি ন্যায়ের সততার অবিচল নিষ্ঠা তিনি যেন একটা স্ফুলিঙ্গ ছিলেন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার। তার আদর্শকে মাথায় রেখেই এই শিক্ষিকা ভেবেছিলেন এই বিদ্যালয়টি যেহেতু বালিকা বিদ্যালয় তাই এই বিদ্যালয়ে ওঁর একটি মূর্তি থাকা দরকার। তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এবং ওঁর আদর্শকে পরবর্তী প্রজন্মে উদ্বুদ্ধ করার জন্যেই তিনি এই মূর্তি প্রদান করেন। দীর্ঘদিনের সুপ তৈরি চা পূরণ হওয়াতে তিনি ভীষণভাবে আপ্লুত। ওইদিনের এই আনন্দযজ্ঞে যাঁরা সামিল হয়েছিলেন তাদের প্রতিও তিনি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আবেক্ষ মূর্তি উন্মোচন ও আগুনের পরশমণি বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। তারপর একে একে মাল্যদান, পুষ্পার্ঘ অর্পণ এরপর বিদ্যালয়ের মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়। মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের চন্দনের টিপ ব্যাচ পুষ্প স্তবক ও কিছু মিষ্টি উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর মূল অনুষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে পরিবেশিত হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং অন্য বিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও আজকের এই মহতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল। কবিতা পাঠ কবিতা আবৃত্তি বক্তব্য নাচ গান প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে অনুষ্ঠানের শেষ বক্তব্য প্রদান করেছিলেন এস আই অফিসের প্রাক্তন স্কুল ইন্সপেক্টর বিদ্যাধর মহাশয় তাঁর বক্তব্য আজকের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আজ বিভিন্ন গুণীজনের সমাবেশে বিদ্যালয় ধন্য। বিদ্যালয়ের তরফ থেকে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।এদিন কালনা শহর ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
