



তনুজা বন্দ্যোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : একটা গানই বদলে দিল সবকিছু। ‘তুম হি হো’ শুনেই হৃদয় হারিয়েছিলেন ব্রিটিশ সঙ্গীততারকা এড শিরন (Ed Sheeran)। সেই থেকেই শুরু এক বন্ধুত্বের সুরেলা যাত্রা। সেই যাত্রার এ পর্যন্ত পরিণতি ‘স্যাফায়ার’ (Sapphire) একটি আন্তর্জাতিক মিউজিক ভিডিও। যেখানে উঠে এসেছে অরিজিৎ সিংহ (Arijit Singh)-এর মাটি, মানুষ আর মন ছোঁয়া মুহূর্তগুলি।এডের কথায়, “প্রথম শুনেছিলাম ‘আশিকি ২’ ছবিতে অরিজিতের গান। ‘তুম হি হো’ শুনে মনে হল, এই মানুষটির সঙ্গে একদিন গান করতেই হবে।” এবং সেটাই ঘটল। প্রথম পরিচয় ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, তার পর লন্ডনের একটি কনসার্টে সরাসরি সাক্ষাৎ। সেই সন্ধ্যাতেই মঞ্চ ভাগ করে নেন দুই শিল্পী, গাইতে থাকেন সুরের আলাপে। মঞ্চের সেই মুহূর্তই হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের ‘স্যাফায়ার’-এর সূচনা।
Read : Sitare Zameen Par : বিয়ের পর নায়িকারা ‘অদৃশ্য’, বলিউডকে একহাত নিলেন জেনেলিয়া
তবে শুধু গানের জগতেই নয়। এ বন্ধুত্ব ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার এক প্রান্তিক শহরে। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) জিয়াগঞ্জে (Jiaganj)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে একটি ভিডিও। অরিজিতের স্কুটির পেছনে বসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এড শিরন, কখনও গঙ্গার নৌকায়, কখনও গ্রামের অলিগলিতে। তখনও অনেকেই বুঝতে পারেননি, এই সফর আসলে ছিল একটি মিউজিক্যাল অধ্যায়ের প্রস্তুতি। এড জানিয়েছেন, “আমি চাইছিলাম আমাদের গানটা ওর শহরে রেকর্ড করতে। অরিজিৎ বলল, ‘আমার শহরে এসো, আমার সংস্কৃতি, আমার জীবনটা অনুভব করো’। তারপর কলকাতা থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছলাম জিয়াগঞ্জে। নদীর বুকে সূর্যাস্ত দেখে অভিভূত হলাম। তারপর ওর স্কুটি চড়েই পৌঁছোলাম স্টুডিওতে।” গানের রেকর্ডিং শুরু হল সেখানেই। সেই স্টুডিও, সেই শহর এখন গোটা বিশ্বের চোখে নতুন আলোয় উজ্জ্বল।

‘স্যাফায়ার’-এ কেবল গান নয়, উঠে এসেছে জিয়াগঞ্জের প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর এক অনন্য সখ্যের গল্প। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan)–কেও। তিনিও গলা মেলাচ্ছেন গানটির এক বিশেষ অংশে। এড লিখেছেন, “শাহরুখ খানকে আমি সত্যিই ভালবাসি। তাঁর মতো অভিব্যক্তির জাদু খুব কম শিল্পীর কাছেই আছে।” অন্যদিকে, অরিজিৎ নিজেও মুগ্ধ এই অভিজ্ঞতায়। তিনি বলছেন, “এডের মতো একজন বিশ্বমানের শিল্পী এতটা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছেন, ও আমার শহরে এসে সময় কাটাল, এটা আমার জন্য বিশাল সম্মানের।” গান তৈরির সময় পঞ্জাবি উচ্চারণ এবং ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের বিভিন্ন দিক শিখেছেন এড। এমনকী তিনি বলেছেন, “অরিজিতের কাছেই শিখেছি সেতারের সূক্ষ্মতা।” শুধু তাই নয়, এই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাবা। একসঙ্গে স্কুটি করে গ্রাম পরিভ্রমণ। গঙ্গাবক্ষে সূর্যাস্ত দর্শন এবং অরিজিতের বাড়িতে রাতের খাওয়া। এড বলছেন, “আমার বাবার সঙ্গে কাটানো সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। সঙ্গে অরিজিৎ ছিল বলেই সেটা আরও বিশেষ হয়ে উঠেছিল।” গানটির একটি পঞ্জাবি সংস্করণও মুক্তি পেতে চলেছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তবে তার আগেই, সামাজিক মাধ্যমে ‘স্যাফায়ার’ ঝড় তুলেছে। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, স্পোটিফাইতে মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে গেছে তিন দিনের মধ্যেই। যে গান এক সময় এক বিদেশির মন কেড়েছিল, সেটাই আজ জোড়া দিচ্ছে দুই মহাদেশ, দুই শিল্পী আর দুই সংস্কৃতিকে। গঙ্গার ধার, স্কুটির চাকা, আর সেতারের তার। সব মিলিয়ে এই নতুন বন্ধুত্বের সুর নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিন ধ্বনিত হবে বিশ্বসঙ্গীতের অরণ্যে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Singer Arijit Singh : অরিজিৎ সিং : জিয়াগঞ্জ থেকে বিশ্বমঞ্চে সুরের যাদুকর
