



সাশ্রয় নিউজ ★ কলকাতা : ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) প্রবীণদের জন্য আর্থিক সাহায্য বিতরণের জেরে আয়কর দফতর থেকে পর পর দু’টি চিঠি পেয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। চিঠির বিষয়ে প্রথমে মুখ খোলেন তিনি নিজেই একটি রাজনৈতিক সভা থেকে। সেখানেই ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘চক্রান্ত’ ফাঁস করতে তিনি সেই চিঠির প্রতিলিপি পৌঁছে দেবেন তাঁর নির্বাচনী এলাকার ৭৬ হাজার প্রবীণ নাগরিকের হাতে। দুর্গাপুজোর আগেই এই চিঠিগুলি বিলি করতে দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।
অভিষেকের অভিযোগ, বিজেপি (BJP) ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ভাতা প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কেন ডায়মন্ড হারবারের ৭৬ হাজার প্রবীণ নাগরিককে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলাম, সেই প্রশ্ন তুলে আয়কর দফতর (Income Tax Department) আমাকে দু’বার চিঠি দিয়েছে। ওরা চায় যাতে এই ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এটাই বিজেপির আসল রূপ।’’ তিনি জানান, দু’টি চিঠির মধ্যে একটি পাঠানো হয়েছে ৭ জানুয়ারি, আরেকটি ২৪ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ, মাত্র ৫০ দিনের ব্যবধানে। এই সময়ের মধ্যে এমন বার্তা আসা নিছক ‘পরীক্ষা’ নয়, রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘‘আমরা গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। আমরা যে সরকার চালাচ্ছি, সেটা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সরকার। সেটাই বিজেপির সহ্য হচ্ছে না। তাই আমার বিরুদ্ধে চিঠি আসছে।’’ ডায়মন্ড হারবারের একটি সভায় দাঁড়িয়ে তিনি সরাসরি আক্রমণ করেন বিজেপিকে। বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, আমি আপনাদের জন্য এক হাজার টাকা করে বার্ধক্য ভাতা চালু করেছি জানুয়ারি থেকে। সেটা বিজেপির গায়ে কাঁটা দিয়েছে। তাই আজ কেন্দ্রীয় সংস্থা আমার পিছনে পড়েছে।’’ এই সভা থেকেই অভিষেক দলের কর্মীদের বলেন, পুজোর আগে যেন ৭৬ হাজার মানুষের বাড়িতে আয়কর দফতরের চিঠির কপি পৌঁছে যায়। কারণ, তাঁর মতে, এই চিঠিগুলিই প্রমাণ করবে কেন্দ্র কীভাবে বাংলার মানুষের জন্য তৈরি প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করছে।
উল্লেখ্য, চিঠির প্রসঙ্গ শুধু অভিষেকের বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে, কারণ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) নিজেও এই প্রকল্পের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠি লিখেছেন আয়কর দফতরের গোয়েন্দা শাখার প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর সুনীতা বাইন্সলা (Sunita Bainsla)-কে। শুভেন্দুর অভিযোগ, এই টাকা ‘চুরি করা’ এবং তা বিলি হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে। এই প্রসঙ্গে আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। জানিয়েছিলেন, এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ অর্থাৎ ইডি (ED), সিবিআই (CBI) তদন্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার সেই আশঙ্কাই যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিষেক বলছেন, তিনি ভয় পান না। এই আক্রমণকে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আপনাদের পরিষেবা দিতে চাই, রাজ্য সরকার পরিষেবা দিতে চায়। কিন্তু বিজেপি বাধা দিচ্ছে। ওরা চায়, এই রাজ্যের উন্নয়ন আটকে থাকুক, টাকা গুজরাত বা উত্তরপ্রদেশে চলে যাক।’’ অভিষেক যে আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিয়েছেন, তার সংখ্যাও স্পষ্ট করেছেন তিনি, ডায়মন্ড হারবারের ৭৬ হাজার প্রবীণ নাগরিক। এবার সেই সংখ্যক মানুষের কাছেই পৌঁছবে কেন্দ্রীয় চিঠির ‘কপি’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি নিছক একটি প্রতিক্রিয়া নয়, বরং বিজেপির বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ-সহ’ জনমত গঠনের পরিকল্পনা। পুজোর আগে রাজনীতির ময়দান যে আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার, আয়কর দফতর এই নতুন ‘প্রচার-কৌশল’কে কীভাবে নেয় এবং বিজেপির তরফে এর পাল্টা কী আসে। তবে অভিষেক স্পষ্ট, তিনি চিঠি নয়, তার পেছনের রাজনীতি বুঝিয়ে দিতে চান জনগণকে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Rinku-Priya Love story : রিঙ্কু-প্রিয়ার প্রেমকাহিনি, ক্রিকেট মাঠ থেকে সংসদের অন্দরমহল
