



🍂কবিতা
হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জীবনানন্দ সিরিজ

জোড়া গাঙুরের জল…
সমুদ্র উছলি স্রোত-
জোড়া গাঙুরের জল এসে পুড়িয়েছে
জীবনের চেতনা ধমণী।
আজ আর কোনো সুন্দরের আবাহন নয়
বুকে বুকে আজ শুধু বিষ মাখামাখি,
রঙজল তুচ্ছ করে জন্ম তবু জীবনের সূত্র
দরশায়,অভাগা দোতারা আজও
মুখোশ বাজারে সেই মাটিগান গায়।
উছলি উছলি স্রোত-
ধর্মকথা অন্ধজলে বিসর্জন দিয়ে,
গানের বদলে আজ নামতা আওড়ায়।
একটি জীবনের গল্প
দূরে একটি মানুষ হেঁটে যাচ্ছে তার পোশাকে ব্যবহারে গ্রামের ছাপ স্পষ্ট
একটি কবির দৃষ্টি এখন গ্রামের মধ্যে
চলে গ্যাছে …
কাছেই একটি পানাপুকুর
ঝপ্ করে সুবোধ কাকার জাল জলে পড়লো
আজ তাদের বাড়িতে মাছের পদ হবে ।
একটি গভীর মন খারাপ নিয়ে লেখা কবিতা
একসময় পাখিদের উড়ে চলে যাওয়া আওয়াজের
মতো নিঃস্ব হয়ে যায় ।
আমি মানুষ , পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব
সময়ের কাছে হেরে যাওয়া আমাকে মানায় না।
মনলতা ও জীবনানন্দ
এক পৃথিবী সাফল্যের পিছনে রঙ যেভাবে সর্বহারা হয়, সমস্ত অস্থিরতা
পার করে আউশের ক্ষেত যেভাবে
কুয়াশা করে গ্রাস-
স্তব্ধতারও স্থিরচিত্র হয়,ভালোলাগায়
বুঁদ থাকতে থাকতে প্রেম কখন যে
বিদিশার নেশা হয়ে যায়-
নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে যে আয়োজন
চামর দুলিয়ে চলে যায় দূ…র ছলনায়,
তুমি হয়তো বলবে এ সমস্ত মনের ভুল,
তুমি হয়তো ভাববে প্রতিটি শিকারীর চোখে
প্রেম নয় লোভ জেগে ওঠে।
কাউকে কিছুই না বলে আমি শুধু মনে
মনে ভাববো জীবন মানেই তো লোভ,
শুধু মন জানে জয় করার পর মনে মনে
যে অসুখ প্রহর পোড়ায়, তার চেয়ে
প্রকৃত কেউ হয় না, তার চেয়ে আত্মীয়
কেউ হয় না।
চকমকি…
তর্জনী ছাপিয়ে যে উত্তর চোখে রাখে চোখ,তাকে তুমি ভুল বলো ?
চোখের বদলে যে মৌনতা বুকের
গভীরে রাখে বসতি,তাকে বলো
গভীর চক্রান্ত।
একবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াও,
একবার মাটি ও মমতার কাছে।
একবার শিল্প ও সভ্যতার কাছে গিয়ে দাঁড়াও,একবার উষ্ণতা ও ঘামের কাছে,
একবার পথ ও প্রেরণার সামনে গিয়ে দাঁড়াও,একবার বিপথের আলো ও শর্করার কাছে।
একটি বহুরূপী ভণিতার বেশে দ্রুত
মজ্জায় ঢুকে পড়ছে,সবাই দেখছে
অথচ কেউ দেখতে পাচ্ছে না।
এই রূপই বড় হবে একদিন,
ফুল ও ফল দেবে,বংশ দেবে।
নাহ্-
তোমাদের আর কারোর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হবে না,ভীষণ চমক দিয়ে যে
মুহূর্তে তরী হবে টলমল,নিজেরা বুদ্ধি
করে বেঁচে ফিরে এসো।
রং ও কীর্ত্তন…
চাহিদাকে বরখাস্ত করে জীবন হয় না।
জীবনকে সর্বাঙ্গীন সফল করতে গেলে
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে লাগাম বুঝতে
হয়,ত্যাগের মহিমা বুঝতে হয়…
পদাবলী রাতে জ্যোৎস্না ও জোনাকির
কথা অনেক হয়েছে,প্রেম ও পালকের
কথা অনেক হয়েছে,যা হয় নি,তা হল
চিন্তা ও চৈতন্যের কথা,বুভুক্ষার কথা।
দীর্ঘ বিরতি শেষে যে হলুদ,যে সবুজ
চোখে চোখে ফোয়ারা ওড়ায়,দীর্ঘ
রাতের পর্ যে সমাহিত সকাল,কেন যে
সকল কথা ভুলে যেতে চায় !…
আটচালা রূপ
আটচালা ঘরের মহাত্ম্যে এখনও গমগম করে ঢেঁকিছাট আউশের সুখ,দী…র্ঘ
উষ্ণতা তবু শ্রাবণ জিইয়ে রাখে মাঝরাতে জ্যোৎস্না ও জোনাকির মুখ।
বুকে বুকে প্রেমপত্র জাগে,উষ্ণ হওয়ার আগে সব চোখে লেপটে থাকে না-থাকার সুখ।
সব কি বলতে আছে,
কে-কবে-কখন-কোথায় মনে মনে শিখে গেছে কুয়াশা নিশ্চুপ!
মাহাত্ম্য বদলে যায় কার্নিশে জেগে থাকে
স্বপ্নের ধুপ,কে-কোথায় জীবনের
রঙ্ রূপ কবিতা আওড়ায়,আমি ভাবি
জীবনের মায়াময় রূপ…
আধখানা চাঁদ …
স্বপ্ন ঊছল
দূরবর্তী মাস্তুল একটি প্রবাদ বাক্যের মতো পত্পত্ জেগে আছে।
একটি মেয়ের নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার গল্প-
ধূলোর গভীর দেশে আগুনের মতো জ্বলজ্বল করে,
ভালোবাসা এতোই নিঠুর!…
তোকে বুকের মাঝখানে রেখে অসংখ্য নিদ্রাহীন রাত-
ওরা জানে,খসে যাওয়া পদ্যকাল থেকে মনবিভোর বসন্ত,সবুজগাথা কতোটা পাথর হতে পারে।
একটুখানি স্পর্শ ই তো চেয়েছিলুম,
বিশ্বাসের-
আবেগের-
ভালোলাগার-
ভালোবাসার…
ধরো হঠাৎ ঝড়ে তোমার চেতনা অগোছালো,আর তোমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে একটি বেনামী অভ্যুত্থান,আর তুমি উড়ে যাচ্ছো,
আর তুমি খ’সে যাচ্ছো,
মৃত পাতাদের মতো
মোমবাতিটির শরীর থেকে মাংস খ’সে যাওয়ার মতন
যদি হঠাৎ জানতে পারো
বেনামী স্রোতের ভিড়ে
উড়ে যাওয়া আকর্ষকথা,
জীবনে এতো বেশী বিনয়ী হতে নেই।
তোমার পরাজয়ে কেউ হাসবে এটা তো হতে পারেনা ।
বিরোধ এনেছি আমি আজ তাই প্রবাদ বাক্যের-
যদি ছলনাই ছিল মনে মনে তাহলে জাগাতে গেলে কেন?
সোহাগফুল…
সোহাগী হলুদের পরবে লাল ছড়াবে বলেছিল,নীল ছড়াবে বলেছিল,
ছড়িয়েছে,
লাল-নীল-হলুদ-সবুজ-আসমানী
আরও কত কি!
তারপর এক উদাত্ত বাতাস এসে রাঙাজলে ভরালো উঠোন,
সোহাগী এখন যেন রঙেদের নিষ্পাপ
মায়া,আপাদমস্তক স্বপ্নে ভিজে একাকার হয়ে গেছে…
🍂জীবনানন্দ দাশ-এর ছবি : আন্তর্জালিক
