



এই সময়ের পরিচিত মুখ কবি কুন্তল দাশগুপ্ত। লেখেন গল্প, কবিতা, গদ্য। লেখকের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পুস্তক পাঠক মহলে সমাদৃত। সাশ্রয় নিউজ-এর এই নিয়মিত লেখক পাঠকদের জন্য লিখলেন আলেখ্যটি।
স্মৃতিভার
কুন্তল দাশগুপ্ত
ধুলোর শহর থেকে এত দূরে তবুও সে আমাকে জড়ায়! শহরের ছোঁয়া লেগে মফস্বলের সব সাঁঝবাতি সন্ধেরা উড়ে যায় খোলা-চাল কুলুঙ্গি ও তেল সিঁদুরের দ্বন্দ্বে। ঘাস শুধু ঘাস হয়ে থ্যাঁতলান শরীরের ব্যথায় ব্যথায় ডুবে যায়।
কত কত ফসলের মাঠ গোরে চ’লে গেল, কত গাছ ভয়ে ভয়ে কাঠ…
কংক্রিটে জমে গেল শহরের ছাঁদ—
তবে,চকচকে রুপোর শরীর নিয়ে সর্পিল ট্রাম-লাইনের কথকতা আজও অধরা রয়ে গেছে,
ধরা যায়? আদৌ? ধরাধরি খেলতে খেলতেই দেখি ভোর হেমন্তের আলপথে সটান দাঁড়িয়ে আছে।
আলপথ?
কই আর!
ফসল স্তন্যশীর্ষে ঠোঁট রাখা মফস্বলের ভাগে নেই আর। নেই আর কার্তিক-কুয়াশার বৈভব।
তবু কি কুয়াশা নেই? আছে, আমার দু’চোখে তার প্যাচপ্যাচে লেই। কিছুতে যাওয়ার নয়। কচলে কচলে চোখ তেতো। চারিদিকে কালমেঘ দেখি। কলম-কাণ্ড জুড়ে কালমেঘ চিরতার বই-কুণ্ঠ। পাতায় পাতায় যত অমার্জনীয় বিন্দু অচলমিতির সম্পাদ্যে…
ছাড়া, না-ছাড়া কোনোদিন ইচ্ছাধীন নয় অন্নদাসের। যেতে হয় সম্পাদ্য না মিলিয়েই।
কারো কারো তাড়া থাকে,ঊর্ধ্বশ্বাসে চলে যায়। কারো যাওয়া স্বস্তির— গত, স্থিত,এমনকি অনাগতরও…
অনেকেই নিয়ে যায় রঙের বাক্স। ফেলে রেখে ধুপ-ছাই রং।
অনেকের যাওয়া আর হয়েই ওঠে না।
আমি কি পেরেছি চলে যেতে?
আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে অঘ্রাণ কেমন অগরু-গন্ধ- দেহ আঘ্রাণ করেছে আর নীরবতার বুকে মুখ রেখে অমার্জনীয় এক বিন্দুকে চলতে শেখাচ্ছে প্রাথমিক অবস্থানে ফেরবার অনিবার্য সাধন।
তবু এত নোনাজল বয়ে যায়! ভেসে যায় চন্দ্রবিন্দু চর! পড়ে আসে বিসর্গ বেলা। বসুমতী অ্যাভিনিউ শ্রীযোনি পথের মুখে অপেক্ষায় থাকে টলটলে খড়ি খেলা মাঠে যাবে বলে।
মাঠ যাকে বলি তা কোথায়? মাথামেটিক্সের কোনো গননাই মাঠে গিয়ে মেলে না এখন। খেলা খেলা পড়া করা এখন মাঠের রীতি। আমরা যে মাঠ পুষি বুকের ভেতর, তাতে এত বুনো ঝোপঝাড়! অকাজের। তবু ভারি যত্নের ছিল। এখন মাঠের রীতি জেনেছে কংক্রিট।
আমাদের খোয়া-মাঠ আজ ভারি রীতিমতো! আমরাই রীতিমতো নই।
সময়ের সঙ্গে রীতি সমানুপাতি সম্পর্ক পাতিয়েছে। রিলেটিভিটির ইকুয়েশনে রীতি অনিত্য ব’লে দাগানো। রীতির সঙ্গে নীতি বিগ্রহী রিলেশনে আছে বলে আমরা নীতির রাজা খুঁজতে যাওয়ার আগে সঙ্কীর্ণতাকে অভ্যাস করি। আমাদের মতামতের রং দেয় লক্ষ্মী প্যালেট। তুলি ছেড়ে গেলে প্যালেটের রং ক্রমশ শুকিয়ে ওঠে, ক্যানভাসে জমে ওঠে ভীষণ বিকেল। আলো খায়, ভালো খায়, খেয়ে ফেলে বাসাটুকু ভালো। চিত্রকরের হাতে পড়ে থাকে মহাশূন্য — অনন্ত-সম্ভব।
হে মেধাবী, সমস্ত স্মৃতিভার তবে মেধা ঘরে তুলে নাও। আমাকে বিন্দু রূপ দাও তোমার পাতায়। আগামীগর্ভী সেই বিন্দু-কথন তোমার বিতান ঘরে সজল থাকুক। তুমি তার অঙ্কুর মাটির ইশারা পেলে পুঁতে দেবে নিশ্চিত, তবে ততদিন মুঠোভর পরিমিতি কষে দেখে নিও হাইট ও ডিসট্যান্স।
ছবি : আন্তর্জালিক
