



🍂কবিতাগুচ্ছ
কবি সোমপ্রভা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছদ্মনাম জারা সোমা। নিয়মিত লেখালেখি করছেন দেড় দশক ধরে। জন্ম ও বড় হওয়া উত্তর কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। দীর্ঘদিন ধরে পথকুকুরদের জন্য সেবামূলক পরিষেবাকেন্দ্র চালিয়েছেন। মূলত কবিতা লেখেন। ইতিমধ্যে কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘জারার পদাবলী’, ‘স্যাডো কালচার’ এবং ‘শেষ মাসের কবিতা’। সম্পাদনা করেছেন ‘আর্যাভম’ ও ‘মায়াগাছ’ পত্রিকা। বর্তমানে ‘বারাসত মায়াগাছ সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র’-এর কর্ণধার। একইসঙ্গে চলছে সোমপ্রভার নিয়মিত সাহিত্যচর্চাও। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতাগুচ্ছ।
সোমপ্রভা বন্দ্যোপাধ্যায়
সমারোহে
সংঘাত জড়ো হলে আগুনকে দেখিয়েছি স্নানের দরজা, সাবানের ফেনা থেকে উঠে আসে কস্তুরী গন্ধ, যে মেয়েটার তৃষ্ণা মেটেনি আজন্ম
তাঁকে বলেছি খাজুরাহো দর্শনের কথা
গলিত ফণার মতো আষ্টেপৃষ্টে নামে গরল।
পাহাড় জানে আমাদের মনখারাপ অপারগতা
পাকদণ্ডি বেয়ে নেমে আসা রাস্তায় রাখা থাকে
মেয়েজন্মের কলঙ্ক, উপত্যকায় উড়তে থাকে চোর্তেন।
এতসব প্রলুব্ধ আয়োজনে এ জন্মের কর্মকাণ্ডে পা ছোঁয় গতজন্ম, আঙুল ছুঁয়ে নেমে আসে জলজ মেঘ,তারপর জীবন সমারোহে এগিয়ে চলে ফেরার পথে।।
উৎসর্গ
একটা জীবন ঘুমন্ত কাটালে গল্প জমে
স্মৃতিস্তুপ সরে জানলায় বসে রোদ
আমি মেলে ধরি নতুন অঙ্গীকার
প্রতিরাতে বালিশে গুঁড়ো হয় চাঁদ
প্রবাদপ্রতিম শীত জমে ধূসরতা মেখে
প্রহরী কুকুরের দীর্ঘ সজাগ কান ধরে আলাপ
আমাদের ঘুম নেই। খোলা পিঠ-উঠোনে
নক্ষত্রের সমাবেশে ওঠে আপত্তির কুটকাচালি
লবণজল সরিয়ে খুঁচিয়ে তোলে কচুরিপানা
আমরা জোগাড় করি বিষাদের সরঞ্জাম
কেবল একজীবন কবিতায় উৎসর্গ করব বলে।।
অথচ
অনাহূতের টোকা শুনে দরজা খুলতেই
দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু ও ভোগ
দাঁড়কাকের মতো সারাক্ষণ চিৎকারে বলে
সব ঝ্যুট হ্যায়, ঝ্যুট হ্যায়
প্রতিটি জোছনায় পুড়ে যায় মোম শরীর
না পাওয়াগুলো নরমুণ্ডের মতো
কটিদেশে জড়িয়ে রাখে কাল
বন্দনা বদলে যায় বিলাপে
অমাবস্যায় নির্মিত যুপকাঠে গলা দেয় অনন্ত
অন্ধ ক্রোধ নষ্ট করে সাজানো বাগান
যত্নের চেয়ে যতির প্রাধান্যই বেশি
পাথুরে স্তব্ধতা গিলে খায় সম্পর্ক
হে পার্থ! এ কোন নেশায় ডোবালে নিজেকে
এ কোন ভয়ঙ্কর ভাস্কর্যে মত্ত
ভালোবাসা বুকে ছুঁড়ে দাও ক্যাকটাস
চোখের জিঘাংসায় নদী ও মরুভূমি
অথচ…
হোমকুণ্ড
সানাইয়ের সুর টেনে নেয় পেছনে
নহবৎখানা-মেহমান নওয়াজী-আলতা পা
যে কথা জীবনেও বলা হয়নি
তারই যেন বিস্ফোরণ ঘটবে সন্ধ্যায়
ফুলের মালার মান্যতা সর্বত্র
আমি শুধু দেখি মেহেদি রেখা এঁকে
এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন
হোমকুণ্ড চিরকাল আগ্রাসী।
আচম্বিতে দুয়ারে দাঁড়ায় সম্পর্ক
বোঝাপড়া বুঝে নিয়ে তৈরি করি ট্যুরপ্ল্যান
কিছুটা উপেক্ষা কিছুটা সৌজন্যে
ছুঁয়ে আসি নদী পাহাড়
হয়তো-বা পরিস্থিতি ও অনভ্যাসী ইচ্ছেরা
অজান্তেই তৈরি করে নৈকট্য
চূড়া ছুঁলেও ছুঁতে পারিনা সম্পর্ককে
তবুও পথচলা কুড়িয়ে ঘাসফুলের অভিমান
অজানা প্রশ্নজুড়ে ঝড় তোলে চেনা আদর
দুয়ারে ঝুলে থাকে অর্থহীন অধিকারবোধ।।
আদর
আরণ্যক গল্পটা শুরু হয়েছিল তরিবৎ করে, কিন্তু খানিক পরেই যেন একটু খাপছাড়া,আদিমতা শুরুর আগেই নিভন্ত আঁচ।
দক্ষ খেলোয়ার জানে কীভাবে উস্কে দিতে হয় আগুন, একটা একটা পাতা খুলে বাড়াতে হয় শিখা
অভ্যাসী হাত কোনসূত্রে খোলে জট, পূর্ণচ্ছেদের আগে তারিফ করতে হয় যতিচিহ্নের।
আয়োজন সারা হলেই শুরু হয় পরব, ধামসা মাদলের তালে দুলে ওঠে শরীর, নাচ জানা অথবা নাজানা প্রশ্নাতীত,কেবল তালমেলটাই আসল,
অহঙ্কারী বিলুপ্ত ভাষায় কথা বলে অরণ্য
বট পাকুড়ের পাহাড়, বিনীত ঝর্ণাতলা, পাকদণ্ডী বেয়ে শুরু হয় যোগবিয়োগ, প্রতিধ্বনি ঘুরে ফেরে আনাচকানাচে, আকাশ ফাটিয়ে হেসে উঠতেই দেখি চোখের আয়না ভরে গেছে জলছাপে।।
🍂অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
