



ঈদ কিংবা যে-কোনও উৎসব মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে মিষ্টির জয়জয়কার। আর সেই মিষ্টির তালিকায় সবচেয়ে প্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী নামটি হল লাচ্ছা সেমাই। বাজারচলতি লাচ্ছা সেমাই যতই সুস্বাদু হোক না কেন, ঘরে তৈরি সেমাইয়ের স্বাদ আর তৃপ্তি একেবারে আলাদা। অল্প কিছু উপাদানে একটু ধৈর্য আর ভালবাসা দিয়ে আপনি সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন সুস্বাদু, ঝরঝরে লাচ্ছা সেমাই। লিখলেন: অলিভিয়া সান্যাল
ঈদে মিষ্টি ঘ্রাণ : ঘরোয়া লাচ্ছা সেমাই

উপকরণ
ময়দা : ২ কাপ।
ঘি : ৪ টেবিল চামচ (লাচ্ছা তৈরির জন্য) এবং ভাজার জন্য অতিরিক্ত।
নুন : এক চিমটি।
জল : পরিমাণমতো (ময়ান দেওয়ার জন্য)।
কর্নফ্লাওয়ার : ২ টেবিল চামচ
দুধ :১ লিটার।
চিনি : ১/২ কাপ (রুচি অনুযায়ী কমবেশি করা যেতে পারে)
খোয়া ক্ষীর : ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য)
ছোট এলাচ গুঁড়ো : ১/২ চা চামচ
কাজু, বাদাম ও কিশমিশ : স্বাদ অনুযায়ী

লাচ্ছা কীভাবে তৈরি করবেন
১. প্রথমে ময়ান তৈরি করুন।
একটি বড় পাত্রে ময়দা ছেকে নিন। এর মধ্যে দিন এক চিমটি লবণ এবং ২ টেবিল চামচ ঘি। ভালভাবে মিশিয়ে নিন যাতে ময়দা ময়ানের মত হয়ে আসে। এরপর অল্প অল্প জল দিয়ে নরম ও মসৃণ একটি ডো তৈরি করুন। ঢেকে রাখুন ৩০ মিনিট।
২. ডো থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিন। প্রতিটি লেচি রুটি আকারে পাতলা করে বেলুন। এক রুটির উপর ব্রাশ করে ঘি লাগান। তারপর এর উপর সামান্য কর্নফ্লাওয়ার ছিটিয়ে দিন। এখন আরেকটি রুটির উপর রাখুন। এভাবে ৩-৪টি রুটি একত্রে রাখুন, প্রতিটির মাঝে ঘি ও কর্নফ্লাওয়ার দিন।
৩. একসঙ্গে রাখা রুটিগুলো রোলের মতো গুটিয়ে নিন, যেন এটি একটি মোটা সিলিন্ডারের মতো দেখায়। এবার একটি ধারালো ছুরি দিয়ে সরু সরু করে কাটুন। কাটার পর প্রতিটি টুকরোকে হাত দিয়ে সামান্য চেপে লাচ্ছার মতো গুটিয়ে নিন। চাইলে ফ্রিজে রেখে একটু শক্ত করে নিতে পারেন।
৪. ভাজুন : কড়াইয়ে পরিমাণমতো ঘি গরম করুন। গরম ঘিতে লাচ্ছার টুকরোগুলো অল্প আঁচে ভেজে নিন। লক্ষ্য রাখুন যাতে এটি পুড়ে না যায়। সোনালি রং হলে তুলে রাখুন।

সিরা বা দুধ প্রস্তুত করুন
১. এক লিটার দুধ ফুটিয়ে নিন। ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন।
২. এরপর চিনি ও খোয়া ক্ষীর যোগ করুন। ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
৩. এলাচ গুঁড়ো দিয়ে দিন সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য।
৪. দুধ ঘন হয়ে আসলে ভাজা লাচ্ছা সেমাই দিন। ২-৩ মিনিট নেড়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। বেশি সময় রান্না করলে সেমাই গলে যাবে।

পরিবেশন করুন
লাচ্ছা সেমাই ঠান্ডা বা হালকা গরম যে-কোনওভাবেই পরিবেশন করা যায়। উপর থেকে ভাজা বাদাম, কিশমিশ ও সামান্য ঘন দুধ ছড়িয়ে দিলে আরও দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু হয়ে উঠবে।
মনে রাখবেন : সেমাই বেলার সময় কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার করলে লাচ্ছা আরও ঝরঝরে হয়। ঘি না থাকলে ডালডা ব্যবহার করা যায়, তবে ঘিয়ের স্বাদ অতুলনীয়। দুধে সেমাই দেওয়ার পর বেশি নাড়াচাড়া করবেন না। এতে সেমাই ভেঙে যেতে পারে। একবার তৈরি করা লাচ্ছা শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করা যায় ৭-১০ দিন। লাচ্ছা সেমাই শুধুই একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য আর শিকড়ের টান। ঘরে তৈরি এই সেমাই যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি তৃপ্তিকরও। তাই আর দেরি নয়। এক ছুটির দিনে হাতে তুলে নিন বেলুন, ময়দা আর ভালবাসা। নিজের হাতেই তৈরি করুন সেই চিরচেনা, চিরমধুর লাচ্ছা সেমাই।
সব ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Aratrika Maity : সুচিত্রার ছায়া নন নিজের আলোতে জ্বলতে চান আরাত্রিকা
